ঢাকা , বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গত ৫ বছরে ৪৬৫ কোটি টাকা ভাগাভাগি পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় অদৃশ্য শক্তি নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে-গয়েশ্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে জুলাই গণহত্যা নুরকে বিদেশে পাঠানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের নির্দেশ ইসির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে, আশা শিক্ষা উপদেষ্টার নিষিদ্ধ আ’লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৯ নেতাকর্মী গ্রেফতার ডাকসুর প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকির ঘটনা তদন্তে কমিটি ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ বহাল ৩ গার্মেন্টস মালিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির উদ্যোগ আতঙ্ক কাটেনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নুরুকে হত্যার উদ্দেশে আঘাত করা হয়েছে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত করতে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়তে পারে লাইসেন্স ছাড়া বাজার বসালে ব্যবস্থা নেবে ডিএসসিসি রফতানিতে নতুন শঙ্কা নির্বাচনে পিআর আদায়ে সমঝোতার পথে ইসলামী দলগুলো শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রস্তুতি আপনি বললেই তো নির্বাচন হবে না এক কোটি বিশ লাখ টাকার হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

জাহাজ চলাচল সীমিত করে উল্টোপথে হাঁটছে কর্তৃপক্ষজাহাজ চলাচল সীমিত করে উল্টোপথে হাঁটছে কর্তৃপক্ষ

  • আপলোড সময় : ০৩-০৯-২০২৫ ১১:২০:৩৯ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৩-০৯-২০২৫ ১১:২০:৩৯ পূর্বাহ্ন
জাহাজ চলাচল সীমিত করে উল্টোপথে হাঁটছে কর্তৃপক্ষজাহাজ চলাচল সীমিত করে উল্টোপথে হাঁটছে কর্তৃপক্ষ
চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর অজুহাতে জাহাজ চলাচল সীমিত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ উল্টোপথে হাঁটছে বলে বন্দর ব্যবহারকারীদের অভিযোগ। তাদের মতে, বন্দরের জাহাজ সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ অদ্ভুত ও অযৌক্তিক। যেখানে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা বাড়লে পণ্যের গতি ও বাণিজ্যিক সুযোগ বাড়ে। সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অপারেশনাল দক্ষতা বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরে অনুমোদিত জাহাজের সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অথচ পৃথিবীর সব বন্দরে জাহাজ পেতে মার্কেটিং করা হয়। আর এদেশে জাহাজ না আনার জন্য উল্টো আদেশ দেয়া হচ্ছে। বন্দর ব্যবহারকারীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের সীমাবদ্ধতা ভিন্নভাবে ঢাকতে চাচ্ছে। বিগত ঈদে দীর্ঘ ছুটি, বেসরকারি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ বন্ধ রাখাসহ নানা কাজের খেসারতকে বন্দর কর্তৃপক্ষ ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে। মূলত বন্দরের প্রশাসনিক কাঠামো এবং কাস্টমস প্রক্রিয়া ডিজিটাল না হওয়া বন্দরের মূল অন্তরায়। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ডিজিটাল না হওয়ায় পণ্য খালাসে স্বাভাবিক সময়েই দেরি হয়। তাতে বেড়ে যাচ্ছে জাহাজের গড় অবস্থানকাল। বন্দরে জাহাজ ভেড়ার পর পণ্য ওঠানো-নামানোর গতি ঠিক থাকলেও কাস্টমসের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত কনটেইনার ছাড়া যায় না। ওই প্রক্রিয়ায় ইনভয়েস যাচাই, ফিজিক্যাল পরীক্ষণসহ অনেক ম্যানুয়াল কাজ জড়িত, যা চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে পেছনের সারিতে ঠেলে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজ মালিকদের সংগঠনের কাছে বাদ দেয়ার তালিকায় গিয়ারড ও গিয়ারলেস উভয় ধরনের ১৫টি জাহাজের নাম জমা দিতে সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ১৬টি জাহাজ একসঙ্গে বার্থিং করা যায়, তার মধ্যে ১০টি বার্থ বিশেষ করে কনটেইনার জাহাজের জন্য বরাদ্দ। জাহাজ চলাচলের সংখ্যা বাড়লে বহির্নোঙরে জাহাজের অপেক্ষার সময় (ওয়েটিং টাইম) বাড়ে। তাই বন্দরের দক্ষতা বাড়াতে জাহাজ চলাচল কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে ৯৬টি অনুমোদিত জাহাজ ছিল। তখন বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা ছিল সাত-আট। ওয়েটিং টাইমও দুদিনের মধ্যে ছিল। কিন্তু অ্যাডহক ভিত্তিতে অনুমোদিত কিছু অতিরিক্ত কনটেইনার জাহাজের কারণে বর্তমানে সংখ্যা ১১৮টিতে দাঁড়িয়েছে। ফলে বহির্নোঙরে অপেক্ষার সময় যেমন বেড়েছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে অপারেশনাল কার্যক্ষমতা। তাতে আন্তর্জাতিকভাবে বন্দরটির নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অনুমোদিত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা ৯৬ থেকে ১০০-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় বন্দর। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে শুধু গিয়ারলেস ১৪টি জাহাজ বহির্নোঙরে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাভাবিক সময়ে ওসব জাহাজ তিনদিনের মধ্যে জেটিতে ভেড়ার কথা থাকলেও এখন ৮-১০ দিন লাগছে। ওসব জাহাজে রয়েছে পোশাক খাতের কাঁচামাল ও শিল্পপণ্য। গিয়ারলেস জাহাজগুলোর কোনো নিজস্ব লোডিং-আনলোডিং যন্ত্র থাকে না। ওই জাহাজগুলো পণ্য খালাস বা তোলার জন্য সম্পূর্ণভাবে বন্দরের যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভর করে। আর গিয়ারড জাহাজ হলো ওই জাহাজ, যেগুলোর নিজস্ব লোডিং-আনলোডিং যন্ত্র (যেমন ক্রেন) থাকে। ওই জাহাজগুলো নিজেই পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ করতে পারে, বন্দরের যন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হয় না। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বন্দরে চলাচলরত অনুমোদিত মোট জাহাজ থেকে কমপক্ষে ১৫টি গিয়ারড ও গিয়ারলেস জাহাজ কমাতে শিপিং এজেন্টদের লিখিতভাবে সময় বেঁধে দিয়েছে। অথচ যেসব জাহাজ নিয়মিত কার্গো বহন করছে না কর্তৃপক্ষ সেগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারতো। তাছাড়া অনুমোদন নিয়েও যেসব জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসেনি, সেসব জাহাজের ক্ষেত্রে অনুমোদন বাতিল করার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। কিন্তু এভাবে জাহাজ বাদ দিতে বলা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। জাহাজে কার্গো নমিনেশন হয়ে যাওয়ায় বাদ দিতে গেলে রি-নমিনেশন চার্জ গুনতে হবে। যা মেইন লাইন অপারেটরদের জন্য ব্যয়বহুল এবং পণ্যের দামে প্রভাব ফেলবে। সূত্র আরো জানায়, বিগত ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে বন্দরের ডেলিভারি কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তারপর বড় ধাক্কা ছিলো এনবিআর কর্মকর্তাদের শুল্কায়ন কাজ বন্ধ রাখা। মূলত এ রকম নানা বিষয়ের প্রভাবেই বন্দরে জাহাজজট বেড়েছে। ফলে জাহাজগুলো এসে আবার ৪৮ ঘণ্টায় বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা সেটা সম্ভব হচ্ছে না। বরং এখন শুধু জেটিতে ভেড়ার পরই ওসব জাহাজের সময় লাগছে ৭২ ঘণ্টারও বেশি। আর জেটি খালি না পেয়ে বহির্নোঙরে অন্য জাহাজগুলো এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় অলস পড়ে আছে। কনটেইনার বা লাইনার ব্যবসায়ীদের নিয়মিত চট্টগ্রাম বন্দরে আসা-যাওয়ায় আছে। তারা কমপক্ষে জাহাজকে ছয় মাসের জন্য চার্টার করে। একটা জাহাজে কার্গো নমিনেশন হয়ে গেলে সেটাকে বাদ দেয়া মানে রি-নমিনেশন চার্জ, মেইন লাইন অপারেটরদের জন্য খরচ বাড়বে। ফলে আমদানি-রফতানির খরচও বাড়বে। অথচ কাস্টমস প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে বলা হলেও আসলে প্রপার ডিজিটাইলাইজেশন এখনো হয়নি। ফলে কোনো কারণ না থাকলেও জাহাজ বন্দরে চলে আসার পর ব্যবসায়ীরা পণ্য হাতে পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এদিকে বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, ঈদুল আজহার ১০ দিনের ছুটি শেষে বন্দরে গিয়ারলেস জাহাজজট শুরু হয়েছে। তখন থেকেই বন্দরে আমদানি পণ্য খালাসে স্থবিরতা তৈরি হয়। সাধারণত ৪৮ ঘণ্টায় সেল করা জাহাজগুলো এখন ৭২ ঘণ্টারও বেশি সময় নিচ্ছে। গিয়ারলেস জাহাজ এনসিটিতে চারটি ও সিসিটিতে দুটিসহ মোট ৬টি জাহাজ একসঙ্গে ভেড়ানো যায়। একেকদিন করে সময় বাড়লে সার্বিক জাহাজ পরিচালনায় চরম চাপ তৈরি হয়। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে জাহাজ সংখ্যা কমানোর বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি অনলাইন বিলিং ও এক্সপোর্ট জেনারেল মেনিফেস্ট (ইজিএম) জমা প্রক্রিয়াও জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ব্যবসায়ীদের মতে, বন্দর অপারেশনাল সমস্যার সমাধান ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে হতে হবে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, এনওসি, ইন্সপেকশন ও কনসাইনমেন্ট রিলিজ সবখানেই দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। সময়মতো জাহাজ না পেলে সরবরাহ চেইন ও উৎপাদনে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। আর জাহাজ বন্দরে আসার পরও খালাস প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে না পারাটা শুধু ব্যবসায়িক ক্ষতি নয়, বরং ড্যামারেজ হিসেবে প্রচুর ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। মূলত কাস্টমস, বন্দর, বিএসটিআই, ব্যাংকসহ অনেক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই বড় সমস্যা। একটির বিলম্ব মানেই পুরো প্রক্রিয়া বন্ধ। অন্যদিকে কাস্টমস সংশ্লিষ্টদের মতে, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া এখনো শতভাগ আধুনিক হয়নি। তবে ধাপে ধাপে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। প্রায়ই দেখা যায় বিল অব এন্ট্রিতে অসংগতি থাকে, যা যাচাই করতে সময় লাগে। তাছাড়া নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছু পণ্যকে ফিজিক্যাল পরীক্ষা করতেই হয়। বিশেষ করে উচ্চ ট্যারিফ আইটেমে। তাতে জাহাজে রাখা কনটেইনার খালাসে দেরি হয় কিন্তু সেটা বন্দরের নীতি বা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করা হয়। আরো যেসব প্রযুক্তিগত কাজ চলমান আছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে আশা করা যায় জাহাজের অবস্থানকাল আরো কমে আসবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই দেশের আমদানি-রফতানি ব্যাহত করতে চাই না। কিন্তু বাস্তবতা হলো বন্দরে অতিরিক্ত ভেসেল চলাচলের কারণে বহির্নোঙরে জাহাজের ভিড় বেড়েছে। এতে গড় ওয়েটিং টাইম বেড়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ে সামগ্রিক টার্ন অ্যারাউন্ড টাইমে। তাই আমরা একটি যৌক্তিক সীমার মধ্যে জাহাজের সংখ্যা রাখতে চাই, যাতে বন্দর আরো কার্যকরভাবে পরিচালিত হয়। তবে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়ার যে জটিলতা সেটা বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ